সেকেন্ডারি মার্কেটের বিনিয়োগকারীরা আইপিও শেয়ারে বিনিয়োগ করে সম্প্রতি বড় ক্ষতির মুখে পড়েছেন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, আইপিও শেয়ার এখন তাদের কাছে আতঙ্ক। পুঁজিবাজারে আসার পর লেনদেনের শুরুতে ডোমিনোস স্টিল সিস্টেমস, রবি আজিয়াটা, এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশন এবং সর্বশেষ মীর আকতার হোসাইনের শেয়ার বিনিয়োগকারীদের কাছে আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে। নানা গুজবে হুলস্থুল পড়ে যায়। টানা দরও বাড়তে থাকে শেয়ারগুলোর। কিন্তু তারপর আচমকা নিম্নমুখী হয় শেয়ারগুলোর দর। বিনিয়োগকারীরা বুঝে উঠার আগেই টানা কমতে থাকে যেখান থেকে উঠেছিল, সেখানের দিকে। গুজবে কান দিয়ে চড়া দরে যারা কোম্পানিগুলোর শেয়ারে কিনেছিলেন, তারা এখন ভালোভাবেই ফেঁসে গেছেন।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, আগের তিনটি কোম্পানির শেয়ার সেকেন্ডারি মার্কেটে লেনদেন শুরুর পর টানা দর বৃদ্ধির যে প্রবণতা দেখা গেছে, মীর আকতারের ক্ষেত্রে সেটা দেখা যায়নি। কারণ তৃতীয় দিনই মীর আকতার হোসাইনের শেয়ারে আগ্রহে ভাটা পড়ে বিনিয়োগকারীদের। ফলে লেনদেনের তৃতীয় কার্যদিবসের মাথায় কোম্পানিটির শেয়ার ক্রেতাশুন্য হয়ে যায়। সাম্প্রতিককালে পুঁজিবাজারে আইপিও শেয়ারের ক্ষেত্রে এটি একটি নতুন রেকর্ড।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, পরপর দুই কার্যদিবস মীর আকতারের দর বাড়ে। তবে প্রথম দিন যতটুকু বাড়া সম্ভব, ততটুকু বাড়লেও দ্বিতীয় দিনে যতটুকু বাড়া সম্ভব, ততটুকু বাড়েনি। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী, তালিকাভুক্তির পর প্রথম দুই কার্যদিবসে দর ৫০ শতাংশ করে বাড়তে পারবে। তৃতীয় কার্যদিবস থেকে যথারীতি ১০ শতাংশ করে বাড়বে।
নানা সময় দেখা যায়, নতুন শেয়ার এলেই কোম্পানির মৌলভিত্তি, শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য ও আয়, লভ্যাংশ দেওয়ার সম্ভাবনা বিবেচনা না করেই হুমড়ি খেয়ে পড়েন বিনিয়োগকারীরা। আর এই হুলুস্থুল শেষে দর কমে এলে তাদের অর্থ আটকে যায় দীর্ঘদিনের জন্য। কেউ কেউ বড় লোকসান দিয়ে বের হন।
চলতি বছর রবি তালিকাভুক্তির পর পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটতে থাকে। গত ২৩ ডিসেম্বর লেনদেন শুরুর পর টানা ১৩ কার্যদিবসে সর্বোচ্চ পরিমাণ বেড়ে শেয়ারের দর এক পর্যায়ে ১০ টাকার শেয়ার পৌঁছে যায় ৭৭ টাকায়। এর পরেই শেয়ারটিতে দেখা যায় উল্টো চিত্র। কমতে কমতে শেয়ার দর বর্তমানে টাকার নিচে নেমে এসেছে।
এনার্জিপ্যাকের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। গত ১৮ জানুয়ারি লেনদেন শুরু করা ৩১ টাকা আইপিওর শেয়ার টানা পাঁচ কার্যদিবস বেড়ে হয় ৯২ টাকায়। পরদিন সকালেই তা উঠে ১০১ টাকা ৮০ পয়সায়। আবার সেদিন বিকালেই দর কমে দাঁড়ায় ৮৩ টাকা ৪০ পয়সায়। এরপর ধারাবাহিকভাবে কমতে কমতে এই শেয়ারের দর এখন ৫৫ টাকার নিচে নেমে গেছে।
ডোমিনোস স্টিলের লেনদেন শুরু হয় গত ১ ডিসেম্বর। টানা আট কার্যদিবসে ১০ টাকার শেয়ার বেড়ে হয় ৪৩ টাকা ৩০ পয়সায়। এরপর থেকেই কমতে থাকে। এখন এই কোম্পানির শেয়ার দর ২৪ টাকায় লেনদেন হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে মীর আকতারের শেয়ার লেনদেন শুরুর আগেই পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে নানা কথা লেখা হতে থাকে। নতুন শেয়ার নিয়ে সাবধান করেন অনেকে।
বুকবিল্ডিং পদ্ধতিতে এই কোম্পানিটি তালিকাভুক্ত হয়েছে ৬০ টাকায়। ১০ শতাংশ ছাড়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা শেয়ার পেয়েছেন ৫৪ টাকায়। এই হিসাবে প্রথম দিন ৮১ টাকা এবং দ্বিতীয় দিন ১২১ টাকা ৫০ পয়সা হতে পারত। প্রথম দিনে ৮১ টাকায় লেনদেন হয়েছে কেবল ৩২০টি শেয়ারের। সেই হিসাবে আসল লেনদেন হয়েছে মূলত দ্বিতীয় দিনে। এদিন বিক্রি হয় ৪৯ লাখ ৮৪ হাজার ৮৯১টি শেয়ার।
কোম্পানিটি দুই কোটি সাত লাখ ৭১ হাজার ৫৪৭টি শেয়ার ছেড়ে ১২৫ কোটি টাকা তুলেছে। এই হিসাবে চার ভাগের একভাগের কিছু কম শেয়ার দুই দিনেই হাতবদল হলো। আগের তিনটি কোম্পানির সঙ্গে মীর আক্তারের শেয়ারের লেনদেনের পার্থক্য হলো, দ্বিতীয় কার্যদিবসে এই কোম্পানিটি শেয়ারমূল্য প্রান্তসীমা তো স্পষ্ট করেইনি, উল্টো উঠানামা কমেছে। সর্বোচ্চ ১১৭ টাকা থেকে সর্বনিম্ন ৯৫ টাকায় লেনদেন হয়েছে। দিন শেষে ১০০ টাকা ২০ পয়সায় লেনদেন শেষ হয়। তৃতীয় দিন বৃহস্পতিবার শেয়ারটি ৯০.২০ টাকায় ক্রেতা সংকটে পড়ে যায়।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বিনিয়োগকারীদের ধৈর্য্য ধারন করার পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, নানা কারণে আইপিও শেয়ার দরে পতন দেখা দিয়েছে। এ অবস্থা হয়তো খুব বেশি স্থায়ী হবে না। তবে তারা বিনিয়োগকারীদের বিচার বিশ্লেষণ করে বিনিয়োগ করার পরামর্শ দিয়েছেন।