দেশের পুঁজিবাজারে ঢালাও দরপতন অব্যাহত রয়েছে। সর্বশেষ ১১ ফেব্রুয়ারির পর থেকে চলমান দরপতন ঠেকাতে পারছে না পুঁজিবাজার। এতে শেষ ৩৯ কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসইর) প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৬৭২ দশমিক ৪৯ পয়েন্ট; হারিয়েছে বড় অঙ্কের বাজার মূলধন। যদিও চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকলেও নিরুত্তাপ নির্বাচনের প্রভাব পড়েনি পুঁজিবাজারে। আর নির্বাচন পরবর্তীতে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়ায় বাজার তেজি হবে এমন প্রত্যাশা ছিল বিনিয়োগকারীদের। কিন্তু অব্যাহত দরপতন বিনিয়োগকারীদের মাঝে কেবল হতাশা বাড়াচ্ছে।
ডিএসইর তথ্য মতে, গেল ১১ ফেব্রুয়ারি সূচক বছরের সর্বোচ্চ অবস্থান ৬৪২৪ দশমিক ৯৪ পয়েন্টে ছিল, যা গতকাল মঙ্গলবার ৫ হাজার ৭৭৪ দশমিক ৫৮ পয়েন্টে নেমে এসেছে। এ হিসাবে প্রায় তিন মাস বা ৩৯ কার্যদিবসে সূচক কমেছে ৬৭২ দশমিক ৪৮ পয়েন্ট। এ সময়ে ২৮ কার্যদিবসই সূচকের পতন হয়েছে; এতে সূচক কমেছে ১ হাজার ৫৮ দশমিক ৪৮ পয়েন্ট। যদিও বাকি মাত্র ১১ কার্যদিবসে সূচকের উত্থানে যোগ হয়েছে ৩৮৬ দশমিক ২০ পয়েন্ট। তবে ঈদুল ফিতরের ছুটির আগে টানা চার কার্যদিবসে সূচকের ঊর্ধ্বমুখী বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েও হতাশ করে বিনিয়োগকারীদের। ঈদের ছুটি শেষে টানা দুই কার্যদিবসেই সূচকের পতন হয়েছে। এতে বাজারের পতন আরও দীর্ঘ করেছে।
গত ১১ ফেব্রুয়ারি ৭ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকার বাজার মূলধন ছিল; তবে গতকাল মঙ্গলবার নেমে আসে ৬ লাখ ৭৯ হাজার কোটি টাকায়। এ হিসাবে গত ৩৯ কার্যদিবসে বাজার মূলধন কমেছে ৯৬ হাজার কোটি টাকা।
তবে এই সময়ে লেনদেনে সাময়িক স্বস্তি মিললেও তা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। ১১ জানুয়ারি ১ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা লেনদেন হয়। পরবর্তীতে এই অঙ্ক ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকে। গত ১৫ এপ্রিল লেনদেন নেমে আসে ৩৬৭ কোটি ৫৩ লাখ টাকায়। এতে সর্বশেষ ৩৯ কার্যদিবসে গড় লেনদেন হয় ৬৯৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।
প্রসঙ্গত, পুঁজিবাজারে দরপতন ঠেকাতে ২০২২ সালের ২৮ জুলাই শেয়ারের সর্বনিম্ন মূল্যস্তর বা ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ফ্লোর প্রাইস এমন একটি ব্যবস্থা, যেখানে কোনো শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড বিএসইসির বেঁধে দেয়া দামের নিচে নামতে পারে না। দেড় বছর ধরে পুঁজিবাজারে ফ্লোর প্রাইস ব্যবস্থা আরোপিত ছিল। তাতে পুঁজিবাজারে এক ধরনের স্থবিরতা নেমে আসে। কমে যায় লেনদেন। এমন এক পরিস্থিতিতে গত ২১ জানুয়ারি প্রথম দফায় ৩৫টি বাদে বাকি সব প্রতিষ্ঠানের ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়া হয়। দ্বিতীয় দফায় ২৩ জানুয়ারি তুলে নেয়া হয় আরও ২৩ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস। সর্বশেষ ৬ ফেব্রুয়ারি আরও ৬ কোম্পানির ওপর থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। বর্তমানে যে ছয়টি কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি, সেগুলো হলো বেক্সিমকো লিমিটেড, খুলনা পাওয়ার, বিএসআরএম লিমিটেড, ইসলামী ব্যাংক, মেঘনা পেট্রোলিয়াম ও শাহজিবাজার পাওয়ার।