দেশের পুঁজিবাজার থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়ার পর অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দর ঢালাওভাবে পতন হয়। তবে বাজারে এমন পতনের মধ্যেও ৭০ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের দর বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে কিছু দুর্বল কোম্পানির শেয়ারদরের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি হয়েছে। পাশাপাশি নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দামও বেড়েছে। এর মধ্যে ‘এন’ ক্যাটাগরির কোম্পানি সিকদার ইন্সুরেন্সের শেয়ারের দাম সর্বোচ্চ ২৩৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্যমতে, তালিকাভুক্তির প্রথম দিন ২৪ জানুয়ারি কোম্পাটির শেয়ার দর ছিল ১১ টাকা, যা ২০ মার্চ ৩৬ টাকা ৯০ পয়সায় পৌঁছায়। এ সময়ের ব্যবাধানে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ২৫ টাকা ৯০ পয়সা বা ২৩৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ। দর বৃদ্ধিতে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে একই ক্যাটাগরির আরেক কোম্পানি এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের শেয়ার। ৬ মার্চ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন শুরু হয়। ওই সময় দর ছিল ২২ টাকা, যা ২০ মার্চ ৪১ টাকা ১০ পয়সায় পৌঁছায়। অর্থাৎ দুই সপ্তাহে কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে ১৯ টাকা ১০ পয়সা বা ৮৬ দশমিক ৮১ শতাংশ।
দর বৃদ্ধিতে পরের অবস্থানে রয়েছে আফতাব অটোমোবাইলসের শেয়ার। ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়ার পরের দুই মাসে (২১ জানুয়ারি থেকে ২০ মার্চ) কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৬৯ দশমিক ২৮ শতাংশ। এছাড়া একই সময়ে দর বৃদ্ধি পাওয়া অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে সেন্ট্রাল ফার্মার শেয়ার ৬৪ দশমিক ৪০ শতাংশ, পিপলস লিজিং ফাইন্যান্সের ৫৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ, সিটি জেনারেল ইন্সুরেন্সের ৫৩ দশমিক ৬ শতাংশ দর বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শেয়ারদর বেড়েছে ফুয়াং সিরামিক, সেন্ট্রাল ইন্সুরেন্স, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ এবং লভেলো আইক্রিমের। ৩০ থেকে ৪০ শতাংশের মধ্যে কেবল ফাইন ফুডসের শেয়ার দর বেড়েছে ৩১ দশমিক ২৪ শতাংশ। ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে মিথুন নিটিং অ্যান্ড ডায়িং, মালেক স্পিনিং, আনলিমা ডায়িং, জুট স্পিনিং ও ওমিক্স ইলেকট্রোডের শেয়ার। এছাড়া ১০ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে ১৫টির এবং ১০ শতাংশের কম দর বৃদ্ধি পেয়েছে ৩৬ কোম্পানির শেয়ার।
পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্টরা বলেন, বাজারে দুর্বল কোম্পানিগুলোর অধিকহারে দর বৃদ্ধি একটি দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা। এমন অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বাজার বিমুখ হচ্ছে। আবার ব্যাংকে সঞ্চয় করলে নিশ্চিত মুনাফা পাচ্ছে, তাই বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজার থেকে অর্থ তুলে ব্যাংকে বিনিয়োগ করছে। বাজারের অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধিসহ বিভিন্ন অনিয়ম দূরীকরণে কঠোর হওয়া উচিত পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের শিক্ষক ড. আল-আমীন শেয়ার বিজকে বলেন, পুঁজিবাজারে ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত হচ্ছে না। যে কয়েকটি ভালো কোম্পানি বাজারে এসেছে তাদেরও সাধারণ শেয়ার খুবই নগণ্য। ফলে বাজারে অল্প মূলধনি এবং দুর্বল কোম্পানির শেয়ারগুলোতে অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধি ঘটে থাকে। আর বাজারে কালোবাজারি চক্র ছোট কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজির মাধ্যমে অনেক সময় অধিক হারে দর বৃদ্ধি করে থাকে। এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিত ভালো কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তকরণে কার্যকরি উদ্যোগ নেয়া।