সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রোববার শেয়ারবাজারে ফ্লোর ছেড়ে লেনদেন শুরু করে গ্রামীণফোন। ওইদিন মেগা কোম্পানিটির চাপে শেয়ারবাজারে সুচকের পতন হয় ৩৯ পয়েন্ট।
দ্বিতীয় দিন সোমবার ফ্লোর ছেড়ে লেনদেনে ফেরে বৃটিশ অ্যামেরিকান ট্যোবাকো-বিএটিবিসি। এদিন শেয়ারবাজারের সূচক কমে যায় আরও ৩৯ পয়েন্ট।
আজ গ্রামীণফোন ও বিএটিবিসি জোটবদ্ধ হয়ে শেয়ারবাজারের সূচকের পতন ঘটায় আরও ৪৪ পয়েন্ট। অর্থাৎ তিন কর্মদিবসে মেগা এই দুই শেয়ার যুগপৎভাবে শেয়ারবাজারের সূচক গায়েব করে দিয়েছে ১২২ পয়েন্ট।
তথ্য বিশ্লেষনে দেখা যায়, রোববার ও সোমবার কেবল গ্রামীণফোন ও বিএটিবিসি শেয়ারবাজারের সূচক কমিয়েছে ৪৮ পয়েন্ট। আজ কমিয়েছে আরও ২৯ পয়েন্ট। তিন দিনে বড় মূলধনী শীর্ষ এই দুই কোম্পানি শেয়ারবাজারের সূচক হাওয়া করে দিয়েছে ৭৭ পয়েন্ট। বাকি ৪৫ পয়েন্ট পড়েছে মেগা কোম্পানি দুটির চাপে বাজার নেতিবাচক হওয়ায় অন্যান্য কোম্পানির লাফালাফিতে।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, আজ বাজারের শুরুতে বিএটিবিটি ক্রেতাশুন্য হয়ে যায়। এই সময়ে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সূচক পড়ে যায় ২৭ পয়েন্ট। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যে শেয়ারটিতে ক্রেতা ফিরতে শুরু করে। ফলে সূচকের পতনও কমতে থাকে।
এক পর্যায়ে বিএটিবি ও গ্রামীণফোনের লেনদেনে বড় গতি দেখা যায় এবং শেয়ার দুটির পতনও কমতে থাকে। এতে লেনদেনের ২২ মিনিটের মাথায় ডিএসইর সূচক আগের দিনের চেয়ে ১২ পয়েন্টের বেশি বেড়ে লেনদেন হয়।
কিন্তু তারপর আবারও কোম্পানি দুটির সঙ্গে অন্যান্য বড় মূলধনী কয়েকটি কোম্পানির শেয়ারে বড় সেল প্রেসার দেখা যায়। ফলে বাজার আবারও নেতিবাচক প্রবণতায় ধাবিত হয়। তারপর বাজার কয়েক বার উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও দাঁড়াতে পারেনি।
এদিকে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত তিন দিনই বাজার যখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে, তখনই বাজারে অস্বাভাবিক সেল প্রেসার দেখা গেছে। যার ফলে বাজার ঘুরেফিরে বড় পতনের বৃত্তে আটকে গেছে। তাঁদের মতে, অস্বাভাবিক এই সেল প্রেসার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এটি বড়দের মারপ্যাঁচ। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা উচিত। এই অনৈতিক কাজের সঙ্গে কয়েকটি বড় ব্রোকারেজ হাউজের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলেও তারা সন্দেহ করছেন।
এদিকে শেয়ারবাজারের টেকনিক্যাল অ্যানালিস্টরা বলছেন, বাজার আজ ৬ হাজার ১৩১-এ সাপোর্ট নিয়েছে। ৬ হাজার ১৩০ হলো বাজারের বড় সাপোর্ট, যা আজ ভাঙ্গতে পারেনি। এছাড়া, বিএটিবিসি ও গ্রামীণফোনের শেয়ারদর যা সংশোধন হওয়ার হয়ে গেছে। আগামীকাল থেকে শেয়ার দুটি হয়তো ঘুরে দাঁড়াবে। যদি বড় বিনিয়োগকারীদের কোনা মারপ্যাঁচ না থাকে, তাহলে আগামীকাল থেকে বাজার অবশ্যই ঘুরে দাঁড়াবে।
মঙ্গলবারের বাজার পর্যালোচনা
আজ মঙ্গলবার (০৫ মার্চ) ডিএসইর প্রধান প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৪৪.১০ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৬ হাজার ১৩১ পয়েন্টে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরীয়াহ সূচক ৪.২৭ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৩৪০ পয়েন্টে এবং ডিএসই-৩০ সূচক ১০.৬১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৯৭ পয়েন্টে।
আজ ডিএসইতে ৮৪৩ কোটি ৭২ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের কর্মদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৭৯৩ কোটি ৬৭ লাখ টাকার।
আজ ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৯৭টি প্রতিষ্ঠানের ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১০২টির, কমেছে ২৩২টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৬৩টির।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) আজ ১২ কোটি ৭৪ লাখ ১১ হাজার টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ১৬ কোটি ৩৪ লাখ ০৭ হাজার টাকার শেয়ার ও ইউনিট।
আজ সিএসইতে ২৫৫টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৮২টির, কমেছে ১৩৪টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৯টি প্রতিষ্ঠানের।
আগের দিন সিএসইতে ২৫১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। যার মধ্যে দর বেড়েছিল ৭৭টির, কমেছিল ১৪৬টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ২৮টি প্রতিষ্ঠানের।