বিদায়ী সপ্তাহে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত দুই কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ বিনিয়োগকারীদের জন্য দুটি পৃথক সংবেদনশীল তথ্য প্রচার করেছে। সংবেদনশীল তথ্য দুটি আসার আগে কোম্পানি দুটির শেয়ারদর ঊর্ধ্বগতিতে ছিল।
কিন্তু সংবেদনশীল তথ্য আসার পর কোম্পানি দুটির শেয়ারদর পতন প্রবণতায় চলে আসে। যার কারণে সংবেদনশীল তথ্যের ভিত্তিতে যারা কোম্পানি দুটির শেয়ার কিনেছেন, তারা এখন লোকসানের শঙ্কায় রয়েছেন।
কোম্পানি দুটি হলো-জেমিনি সী ফুড ও আলিফ ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড।
জেমিনি সী ফুড
বিদায়ী সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) জেমিনি সী ফুডের ১টির বিপরীতে ২টি রাইট শেয়ার ইস্যু করার সংবাদ প্রচার করা হয়। রাইট শেয়ারের মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৫০ টাকা প্রিমিয়ামসহ ৬০ টাকায়।
এর আগে ০১ ফেব্রুয়ারি শেয়ারটি কেনাবেচা হয়েছে ৩২৬ টাকা ৬০ পয়সায়। তারপর থেকে ইনসাইডার ট্রেডিংয়ের ফলে শেয়ারটির দাম ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকে। রাইট শেয়ার ঘোষণার আগের কর্মদিবস বৃহস্পতিবার শেয়ারটির দাম ক্লোজিং হয় ৪২৮ টাকা ৩০ পয়সায়। কিন্তু রাইট শেয়ার ঘোষণার দিন দাম ৪৭০ টাকায় ওঠলেও দিনশেষে আগের দিনের কমে ক্লোজিং হয় ৪০৩ টাকা ৬০ পয়সায়।
তারপর থেকে শেয়ারটির দাম সাইড লাইনে লেনদেন চলছে। আর ওপরে উঠছে না। যারা রাইট শেয়ার ঘোষণার খবরে মুনাফার আশায় ৪৩০ টাকা থেকে ৪৭০ টাকায় শেয়ারটি কিনেছেন, তারা এখন লোকসানে রয়েছেন। শেয়ারটি থেকে আদৌ মুনাফা পাবেন কি-না, তা নিয়ে রয়েছেন এখন টেনশনে।
আলিফ ইন্ডাষ্ট্রিজ
বিদায়ী সপ্তাহের বুধবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) আলিফ ইন্ডাষ্ট্রিজের পরিচালনা পর্ষদ বিনিয়োগকারীদের জানায়, তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি অ-তালিকাভুক্ত দুটি কোম্পানি কিনে নিচ্ছে। যদিও তালিকাভুক্ত কোম্পানির সাথে অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির একত্রীকরণ কোনোভাবেই ভালো খবর নয়, তারপরও এটি এমনভাবে প্রচার করা হয় যেন কোম্পানিটি দুটি সোনার হরিণ কিনে নিচ্ছে।
কোম্পানিটির সংবেদনশীল ওই তথ্য প্রচারের পর মুনাফার আশায় বিনিয়োগকারীরা শেয়ারটি কিনতে থাকেন। যার কারণে ওইদিন শেয়ারটির বিশাল লেনদেন হয় এবং শেয়ারটির দাম আগের দিনের চেয়ে কিছুটা ওপরে ক্লোজিং হয়। আগের দিন শেয়ারটির দাম ক্লোজিং ছিল ৯৩ টাকা ১০ পয়সায়। আরও ওইদিন বুধবার ক্লোজিং হয় ৯৪ টাকা ১০ পয়সায়। কিন্তু পরের দিন বৃহস্পতিবার শেয়ারটির দাম নেমে যায় ৯২ টাকা ৯০ পয়সায়।
এর আগে গত ০১ ফেব্রুয়ারি শেয়ারটির দাম ছিল ৭৫ টাকা ৯০ পয়সায়। তারপর ধারাবাহিকভাবে শেয়ারটির দাম বাড়তে থাকে। সর্বশেষ মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) শেয়ারটির দাম ওঠে ৯৩ টাকা ১০ পয়সায়। অ-তালিকাভুক্ত দুটি কোম্পানি কিনে নেওয়ার খবর প্রচারের দিন শেয়ারটির দাম ৯৬ টাকা পর্যন্ত ওঠে। দিনশেষে ক্লোজিং হয় ৯৪ টাকা ৫০ পয়সায়। কিন্তু পরের দিন বৃহস্পতিবার শেয়ারটির দাম ৯২ টাকা ৯০ পয়সায় নেমে যায়।
বিনিয়োগকারীরা অভিযোগ করছেন, ইনসাইডার ট্রেডিংয়ের কারণে ৭৬ টাকার নিচ থেকে শেয়ারটির দাম ২০ শতাংশ ওপরে তোলা হয়। তারপর অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানি কেনার খবর দিয়ে শেয়ারটি গত দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ দামে বিনিয়োগকারীদের হাতে ধরিয়ে দিচ্ছে। অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানি দুটি কেনার খবরে যারা শেয়ারটি ৯৪ টাকার ওপরে কিনেছেন, তারা এখন লোকসানের শঙ্কায় পড়েছেন।
এর আগেও এই কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষ তালিকাভুক্ত সিএন্ডএ টেক্সটাইল পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে চমকপ্রদ খবর প্রচার করেছিলেন। কোম্পানিটিকে মডেল কোম্পানি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করা হবে এবং বিনিয়োগকারীদের ভালো মুনাফার মুখ দেখাবে। যদিও এর আগেই শেয়ারটির দাম দ্বিগুণেরও বেশি দামে তোলা হয়। তারপর চমকপ্রদ খবর ছড়িয়ে চড়া দামে শেয়ারটি বিনিয়োগকারীদের হাতে ধরিয়ে দেয়। এখন সিএন্ডএ টেক্সটাইল খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। যারা লাভের আশায় শেয়ারটি কিনেছিলেন, তারা এখনো লোকসানের বৃত্তে আটকে আছেন।