পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মোট শেয়ারের উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের সমন্বিত ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা মানছে না কোম্পানিগুলোর পরিচালকরা। সেই সঙ্গে স্বতন্ত্র পরিচালক ছাড়া অন্যদের প্রত্যেককে সর্বনিম্ন ২ শতাংশ শেয়ারধারণ করার বিধান রয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ২০১০ সালে শেয়ারবাজার ধসের পরে ২০১১ সালে এই নিয়ম জারি করে। তবে দীর্ঘ ১৩ বছরেও তালিকাভুক্ত ২৬টি কোম্পানি এই নির্দেশনা পরিপালন করেনি। এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে ২৬টি কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালকেরা পরিশোধিত মূলধনের ন্যূনতম ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। তার মধ্যে বস্ত্র খাতের ৬টি, ওষুধ ও রসায়ন খাতের ৩টি, প্রকৌশল খাতের ৭টি, আইটি খাতের ২টি, খাদ্য খাতের ২টি, আর্থিক খাতের ১টি, পাট খাতের ১টি, জীবন বিমা খাতের ১টি, মিউচুয়াল ফান্ড খাতের ১টি, কর্পোরেট বন্ড ১টি এবং ব্যাংক খাতের ১টি কোম্পানি।
কোম্পানিগুলো হচ্ছে- ফ্যামিলিটেক্স লিমিটেড, এক্টিভ ফাইন, আফতাব অটোমোবাইলস, আলহাজ টেক্সটাইল, অ্যাপোলো ইস্পাত, বিডি থাই অ্যালুমিনিয়াম, বেক্সিমকো গ্রীণ সুকক, সেন্ট্রাল ফার্মা, সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল, ডেল্টা স্পিনিং, ইস্টার্ণ কেবলস, এফএএস ফাইন্যান্স, ফু-ওয়াং ফুড, জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশন, আইএফআইসি ব্যাংক, ফাইন ফুড, ইনটেক লিমিটেড, ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক লিমিটেড, মিথুন নিটিং, নর্দান জুট, অলিম্পিক এক্সেসরিজ, ফার্মা এইড, পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স, পপুলার লাইফ ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ এবং রতনপুর স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেড।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষকদের মতে, যখন কোনো কোম্পানিতে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের শেয়ারধারণের পরিমাণ কমে যায়, তখন তাঁরা ওই কোম্পানির ব্যবসায় মনোযোগ দেন না। ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ওই কোম্পানির শেয়ার কিনে ক্ষতিগ্রস্ত হন। তবে ন্যূনতম ৩০ শতাংশ শেয়ার যদি উদ্যোক্তা এবং পরিচালকেরা কেনেন বা তাঁদের হাতে থাকে, তাহলে এটি বড় একটি ফান্ড রিলিজ করবে। এটি পুঁজিবাজারে চলমান তারল্য সংকট কমাতে সহায়তা করতে পারে।
এবিষয়ে শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম গণমাধ্যমকে বলেন, যেসব কোম্পানি কমিশনের নির্দেশনা পরিপালন করেনি, তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। ন্যূনতম শেয়ারধারণের শর্ত না মেনে এখন পর্যন্ত যারা পরিচালক রয়েছে সেসব কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে পর্ষদ পুনর্গঠন করে দেবে বিএসইসি। কমিশন থেকে সেসব কোম্পানিগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে কমিশন কঠোর অবস্থানে রয়েছে বলে জানান তিনি।
জানা গেছে, বর্তমান কমিশন দায়িত্বে এসে সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ এবং প্রত্যেক পরিচালকের সর্বনিম্ন ২ শতাংশ শেয়ারধারণের নিয়মের পক্ষে কঠোর অবস্থান নেয়। ২০২০ সালের জুলাই মাসে ৪৪টি তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে কমপক্ষে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করার নির্দেশনা দিয়েছিল বিএসইসি। ন্যূনতম দুই শতাংশ শেয়ারধারণের শর্ত পূরণ না করে পদে থাকায় সেই বছরের সেপ্টেম্বরে নয়টি কোম্পানির ১৭ জন পরিচালককে সরিয়ে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে উদ্যোক্তা পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ারধারণের শর্ত পূরণে ব্যর্থ কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হবে বলেও জানানো হয়।
গত ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের পরিশোধিত মূলধনের ন্যূনতম ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের বিষয়ে পুনরায় কঠোর অবস্থান নেয়। যেসব কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা পরিশোধিত মূলধনের ন্যূনতম ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করেনি তাদেরকে সেই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে (১৫ দিনের মধ্যে) এ বিষয়ে পরিকল্পনা জমা দিতে নির্দেশনা জারি করে।
ডিএসই সূত্র মতে, ২০২৩ সালের ৩১ মে পর্যন্ত ২৯টি তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের পরিশোধিত মূলধনের ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ মানেনি। তবে ডিসেম্বর ২০২০ থেকে মে ২০২৩ পর্যন্ত ১৫টি কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করে নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনা পরিপালন করে।
উল্লেখ্য, বিএসইসি ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের এই নির্দেশনা জারির আগে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে বহু অভিযোগ পেয়েছিলো। এখন কমিশন মনে করে যে, তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে অবশ্যই সার্বজনীন নিয়ম মেনে চলতে হবে। যাতে উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা কোম্পানির বিষয়ে মনোনিবেশ করতে পারে এবং শেয়ারবাজারে শৃঙ্খলা ফিরে আসে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশ অনুসারে, উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের সব সময় কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের ন্যূনতম ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে হবে।