দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) প্রতিবছরের মতো এবারও প্রধান সূচক ডিএসইএক্স সমন্বয় করেছে। চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি সূচকটি সমন্বয় করা হয়। তবে এবার সূচক সমন্বয় নিয়ে বিতর্ক ওঠায় গত ২৮ জানুয়ারি এ বিষয়ে ব্যাখ্যাও দিয়েছে ডিএসই। এরই ধারাবাহিকতায় এবারের সূচক সমন্বয় সংক্রান্ত বিষয়ে প্রয়োজনীয় নথি ডিএসইর কাছে তলব করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
সম্প্রতি ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বরাবর এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ডিএসইএক্স সূচক সমন্বয়ের বিষয়ে অনুষ্ঠিত সব পর্ষদ সভা এবং সূচক ব্যবস্থাপনা কমিটির সভার নথি চেয়েছে বিএসইসি। এছাড়াও একই সময়ের সূচক সমন্বয়ের ইতিহাস ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিষয়ে জানতে চেয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
বিএসইসির চিঠিতে বলা হয়, কমিশন পর্যবেক্ষণ করেছে যে, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসি (ডিএসই) ২০২৪ সালের ২১ জানুয়ারি সূচকগুলোর হিসাবের পদ্ধতিতে পরিবর্তন এনেছে। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ৬(৩) অনুযায়ী নথি সরবরাহের অনুরোধ করা যাচ্ছে। বিশেষ করে ২০২০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ডিএসইর সূচক সমন্বয়ের বিষয়ে অনুষ্ঠিত সব পর্ষদ সভা এবং সূচক ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা বিবরণী। এছাড়া ২০২০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সূচক সমন্বয় ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তথ্য, বিশেষ করে কোভিড-১৯ এর লকডাউন চলাকালীন সময়কার তথ্য চাওয়া হয়েছে। এই চিঠি ইস্যুর ৫ কার্যদিবসের মধ্যে উল্লেখিত তথ্য নথি আকারে সরবরাহ করার নির্দেশ দেওয়া হলো।
চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি ডিএসইএক্স সূচক বার্ষিক সমন্বয় নিয়ে ওঠা বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ডিএসই জানায়, ডিএসইএক্স সূচকে বার্ষিক সমন্বয়ের বিষয়ে ডিএসই কর্তৃপক্ষ প্রতি বছরের মতো এবারও অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার সঙ্গে বার্ষিক সমন্বয়ের কাজটি করেছে৷ যেটা এসএন্ডপি ইনডেক্স মেথোডলজি এবং বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত নির্ধারিত পদ্ধতিতেই করা হয়েছে৷
এসএন্ডপি’র ইনডেক্স মেথডোলজি অনুযায়ী রি-ব্যালেন্সিং রেফারেন্স তারিখ অনুযায়ী ফ্লোট সমন্বিত মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন ১০ কোটি টাকার উপর হতে হবে, তবে অন্যান্য যোগ্যতা পূরণ করা সাপেক্ষে বর্তমান সূচক কোম্পানির ক্ষেত্রে তা ৭ কোটি হলেও চলবে। পাশাপাশি স্টকগুলোর ন্যূনতম ছয় মাসের দৈনিক গড় লেনদেনের মূল্য ১০ লাখ টাকা থাকতে হবে। যদি অন্যান্য যোগ্যতা পূরণ করে তবে বর্তমান সূচকের কোম্পানিগুলোর গড় লেনদেন ৭ লাখ টাকা হলেও স্টকটি সূচকে থাকবে। এছাড়া, সূচকের জন্য যোগ্য স্টকগুলোকে রি-ব্যালেন্সিং তারিখের তিন মাস আগের প্রতিমাসে স্বাভাবিক ট্রেডিং কার্যক্রমের অন্তত ৫০ শতাংশ ট্রেডিং দিবস থাকতে হবে।
এ বিষয় বিবেচনা করে এসএন্ডপি ইনডেক্স মেথোডলজি অনুযায়ী ২০২৪ সালে ইনডেক্সে সমন্বয়ের পর ১৬টি নতুন কোম্পানি ডিএসইএক্স সূচকে অন্তর্ভুক্ত হয় এবং ৮৩টি কোম্পানি বাদ পড়ে যায়। ২০১৩ সাল থেকে একই পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে৷ সুতরাং এতে বিভ্রান্ত হওয়ার কোনো কারণ নেই।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ২০১৩ সাল থেকে এসএন্ডপি থেকে প্রদত্ত ইনডেক্স মেথোডোলজির সূত্র অনুযায়ী একটি কমিটি সমন্বয়ের কাজটি করে আসছে।
সমন্বয়ের পর ডিএসইএক্স সূচকে যুক্ত হওয়া কোম্পানিগুলো হলো- লিগ্যাছি ফুটওয়্যার, ডেফোডিল কম্পিউটার্স, তশরিফা ইন্ডাস্ট্রিজ, ইমাম বাটন, জাহিন স্পিনিং, ইউনাইটেড ইনস্যুরেন্স, মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ, রেনউইক যজেনশ্বর, জিলবাংলা সুগার, মেঘনা কনডেন্স মিল্ক, নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালস, মিডল্যান্ড ব্যাংক, লিবরা ইনফিউশন, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ, ইসলামী কমার্শিয়াল ইনস্যুরেন্স এবং চার্টার্ড লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি।
বাদ পড়া কোম্পানিগুলোর বিষয়ে ডিএসই জানিয়েছে, ডিএসইক্স সূচক থেকে বাদ পড়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ১৫টি ব্যাংকের প্রয়োজনীয় বাজার মূলধন রয়েছে। কিন্তু কোম্পানিগুলোর শেয়ার ফ্লোর প্রাইসে থাকার কারণে ডিএসইএক্স সূচক থাকার অন্যতম মানদণ্ড স্টক ট্রেডিং বা টার্নওভারের চাহিদা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে কোম্পানিগুলো।