মহমারি করোনাভাইরাসের প্রভাবে স্থবির হয়ে আছে দেশের শিল্প ও বাণিজ্যের গতি। আর করোনার ক্ষতি পূরণে কী পরিমাণ সময় লাগবে তাও অজানা। সব লিমিয়ে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে বেগ পেতে হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের। বিদায়ী ২০২০ সালে চট্টগ্রামে বিনিয়োগ নিবন্ধন কমেছে ৩ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা। অথচ বন্দর সুবিধাসহ সব ধরনের বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ রয়েছে। পাশাপাশি অর্থনৈতিক অঞ্চল, টার্নেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ অনেক অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলমান।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) সূত্র মতে, বিদায়ী ২০২০ সালে চট্টগ্রাম অঞ্চলে শিল্প, বাণিজ্য ও ট্রেডিং ব্যবসায় দেশি উদ্যোক্তাদের মোট ১০৫টি বিনিয়োগ প্রকল্পের বিপরীতে বিনিয়োগ নিবন্ধন ছিল এক হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। যেখানে কর্মস্থানের সম্ভাবনা ছিল ১০ হাজারের বেশি। আর আগের বছরে ১২০ প্রকল্পের বিপরীতে সম্ভাব্য বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল চার হাজার ৩৯৯ কোটি টাকা। এতে কর্মসংস্থান হয়েছিল সাত হাজার ৬৪৭ জনের। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ নিবন্ধন কমেছে তিন হাজার ১৫৩ কোটি টাকা; যা শতাংশ হিসাবে ৭১ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
এর মধ্যে গত জানুয়ারিতে ১২ প্রকল্পের বিপরীতে দেশীয় উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ নিবন্ধন ছিল ৪২ কোটি ৫১ লাখ টাকা, ফেব্রুয়ারিতে ১৩ প্রকল্পের বিপরীতে বিনিয়োগ নিবন্ধন ছিল ১০৮ কোটি ১৩ লাখ টাকা। মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে ১২ প্রকল্পের বিপরীতে বিনিয়োগ নিবন্ধন ছিল ১৩৩ কোটি ৬২ লাখ টাকা, জুন মাসে চার প্রকল্পের বিপরীতে বিনিয়োগ নিবন্ধন ছিল ২৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা, জুলাই মাসে ১১ প্রকল্পের বিপরীতে বিনিয়োগ নিবন্ধন ছিল ৫২৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা, আগস্টে ১২ প্রকল্পের বিপরীতে বিনিয়োগ নিবন্ধন ছিল ৪৯ কোটি ৬৫ লাখ টাকা, সেপ্টেম্বরে ১৪ প্রকল্পের বিপরীতে বিনিয়োগ নিবন্ধন ছিল ১০৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা, অক্টোবরে ১৬ প্রকল্পের বিপরীতে বিনিয়োগ নিবন্ধন ছিল ১৮৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা, নভেম্বরে তিনটি প্রকল্পের বিপরীতে বিনিয়োগ নিবন্ধন ছিল ৬০ কোটি ৩৩ লাখ টাকা এবং ডিসেম্বরে আট প্রকল্পের বিপরীতে বিনিয়োগ নিবন্ধন ছিল ১৫ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।
অন্যদিকে একক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিনিয়োগ নিবন্ধনে ১০৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শীর্ষে ছিল টিকে গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইউরো শিপিং। প্রতিষ্ঠানটির মোট বিনিয়োগ নিবন্ধন ছিল ৪৭৬ কোটি টাকা। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ৫০ কোটি টাকার কম বিনিয়োগ নিবন্ধন ছিল।
ব্যবসায়ীরা জানান, করোনায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ঋণ অনুমোদনের জটিলতার কারণে অনেক সময় বিনিয়োগ প্রকল্প বাস্তবায়নে সিদ্ধান্ত নেয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। ফলে বিনিয়োগ বাড়ানো কিংবা কীভাবে করোনা ঝুঁকি কমানো যায় তা নিয়ে কৌশলী হওয়ায় বিনিয়োগে রক্ষণশীল ভ‚মিকায় পালন করছেন উদ্যোক্তারা। এ কারণে বিনিয়োগ কমেছে। এছাড়া অনেক ক্ষেত্রে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নীতিনির্ধারকরা বিমাতাসুলভ আচরণ করে। এছাড়া এসময়ে চট্টগ্রামে গ্যাস, বিদ্যুৎ এবং বন্দরসহ অবকাঠামোগত সংকট ছিল। সব বিষয় মিলে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা ঢাকার তুলনায় অনেকটা পিছিয়ে যায়। তবে আশা করছি, আগামী কয়েক দশকে চট্টগ্রাম হবে বিনিয়োগের কেন্দ্রভ‚মি।
এ বিষয়ে প্রিমিয়ার সিমেন্ট মিলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিরুল হক শেয়ার বিজকে বলেন, ‘একদিকে করোনার প্রভাব, অন্যদিকে নীতিগত সহযোগিতার অভাব আছে। প্রণোদনার টাকাও সবাই পায়নি। সীমিত কিছু প্রতিষ্ঠান পেয়েছে। যারা নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করে, তাদের তেমন সুযোগ দেয়া হয় না। অথচ ঋণখেলাপিরা ১০ বছর ঋণ পরিশোধে সুযোগ পায়। আবার যারা নিয়মিত ভ্যাট-কর দেয়, তাদের আরও ভ্যাট-কর দেয়ার জন্য বলা হয়। কিন্তু যারা দেয় না, তাদের খোঁজও নেয়। এজন্য সরকারকে অবশ্যই নীতিগত সুবিধা দিতে হবে।’
এ বিষয়ে শিল্পবাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ সলিম উল্লাহ শেয়ার বিজকে বলেন, ৯০ দশকের পর চট্টগ্রাম ছিল বিনিয়োগের জন্য আকর্ষণীয় জায়গা। তখন শিল্পের জন্য জমি ছিল, দক্ষ ব্যবসায়ী ছিল, বন্দরসহ সব ধরনের সেবা ছিল। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ করেন। আর এখন শিল্পের জন্য জমি সংকট, জমির উচ্চমূল্য, নগরবাসীর সংখ্যা বেড়েছে, কমেছে সেবা প্রদানকারী সংস্থার সক্ষমতা।