মহামারি করোনার বছর ২০২০ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে মাত্র ৮টি প্রতিষ্ঠান। এরপর ২০২১ সালে তালিকাভুক্ত হয় ১৪টি প্রতিষ্ঠান। তবে পরের বছর ২০২২ সালে কমে তালিকাভুক্ত হয় ছয়টি প্রতিষ্ঠান।
আর চলতি ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে তালিকাভুক্ত হয়েছে মাত্র দুটি প্রতিষ্ঠান। এসব কোম্পানি বাজার থেকে তুলেছে মাত্র ৮৬ কোটি টাকার মূলধন। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেয়ারবাজারে সেকেন্ডারি বাজারের সঙ্গে স্থবিরতা নেমেছে প্রাইমারি বাজারেও।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, গত দেড় বছর শেয়ারবাজার একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এই সময়ে লেনদেন ও সূচকসহ সবকিছুই একটি নির্দিষ্ট স্তরে ওঠানামা করছে। এছাড়া ফ্লোর প্রাইসের কারণে তালিকাভুক্ত বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর নিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। ফলে সেকেন্ডারি মার্কেট একটি নির্দিষ্ট জায়গায় আটকে থাকে; যা শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতে উদ্যোক্তাদের আকৃষ্ট করছে না। আর বিনিয়োগকারীরাও আইপিওকে গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছেন না।
বিএসইসির তথ্য মতে, বর্তমানে প্রোটেকটিভ ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স লিমিটেড নামে একটি বিমা কোম্পানির আইপিও আবেদন কমিশনে জমা আছে। প্রতিষ্ঠানটি আইপিওর মাধ্যমে ১ কোটি ৫০ লাখ শেয়ার ইস্যু করে ১৫ কোটি টাকা উত্তোলন করবে।
এছাড়া বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে বাজারে আসতে চায় বেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি ৩৫০ কোটি টাকা উত্তোলন করতে চায়। কিন্তু কোম্পানিটির আইপিও প্রক্রিয়ায় ক্রটি থাকার কারণে সংশোধন করে পুনরায় আবেদন করতে বলা হয়েছে।
বিএসইসির তথ্যমতে, গত পাঁচ বছরে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে ৪৯টি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে ২০২১ সালে। আর ২০১৮ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ১৩টি প্রতিষ্ঠান। আর চলতি ২০২৩ শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে মাত্র দুটি কোম্পানি; যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।
২০১৮ সালে ১৩টি কোম্পানি বাজার থেকে ৫৪৬ কোটি টাকা উত্তোলন করেছে। কোম্পানিগুলো হলো- কুইন সাউথ টেক্সটাইল, অ্যাডভেন্ট ফার্মা, ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন, বসুন্ধরা পেপার মিলস, এসকে স্টিম অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, আমান কটন ফাইবার্স, ভিএফএস থ্রেড ডাইং, এমএল ডাইং, সিলকো ফার্মাসিউটিক্যালস, ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস, কাট্টালি টেক্সটাইল, এসএস স্টিল ও জেনেক্স ইনফোসিস লিমিটেড।
২০১৯ সাল ৮টি কোম্পানি শেয়ারবাজার থেকে উত্তোলন করেছে ৫৫২ কোটি টাকা। কোম্পানিগুলো হলো- স্কয়ার নিটিং কম্পোজিট, রানার অটোমোবাইলস, নিউ লাইন ক্লোথিংস, সিলকো ফার্মাসিউটিক্যালস, কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজ, সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা লিমিটেড, রিং শাইন টেক্সটাইল ও এডিএন টেলিকম।
২০২০ সাল ৮টি কোম্পানি উত্তোলন করেছে ৯৮৫ কোটি ৮৭ লাখ ২৩ হাজার ৩৪০ টাকা। কোম্পানিগুলো হলো- এক্সপ্রেস ইনস্যুরেন্স, ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ, অ্যাসোসিয়েট অক্সিজেন, ডমিনেজ স্টিল বিল্ডিং সিস্টেমস, ক্রিস্টাল ইনস্যুরেন্স, রবি আজিয়াটা, অ্যানার্জি প্যাক জেনারেশন ও মীর আক্তার হোসেন লিমিটেড।
২০২১ সালে তালিকাভুক্ত ১৪টি কোম্পানি শেয়ার ছেড়ে বাজার থেকে ১ হাজার ২৩৩ কোটি ৩৬ লাখ ৯ হাজার ৪০ টাকা উত্তোলন করেছে। এগুলো হলো- তৌফিকা ফুডস অ্যান্ড লাভেলো আইসক্রিম, ই-জেনারেশন, লুব-রেফ (বাংলাদেশ), এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি, ইনডেক্স অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ, সোনালি লাইফ ইনস্যুরেন্স, বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার, সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্শিয়াল ব্যাংক, সেনা কল্যাণ ইনস্যুরেন্স, এসিএমই প্যাস্ট্রিসাইডস, ইউনিয়ন ইনস্যুরেন্স কোম্পানি, বিডি থাই ফুড অ্যান্ড বেভারেজ ও ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেড।
২০২২ সালে মোট ৬টি কোম্পানি আইপিওর মাধ্যমে ৬২৬ কোটি ২৬ লাখ ১০ হাজার ৬০ টাকা উত্তোলন করেছে। এগুলো হলোÑ জেএমআই হসপিটাল রিকুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং, মেঘনা লাইফ ইনস্যুরেন্স, চার্টার্ড লাইফ ইনস্যুরেন্স, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী কমার্শিয়াল ইনস্যুরেন্স কোম্পানি ও নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড।
চলতি ২০২৩ সালের ১০ মাসে দুটি প্রতিষ্ঠান আইপিওর মাধ্যমে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে। প্রতিষ্ঠান দুটি হলো- মিডল্যান্ড ব্যাংক লিমিটেড ও ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স লিমিটেড। প্রতিষ্ঠান দুটি শেয়ারবাজার থেকে ৭০ ও ১৬ কোটি টাকাসহ মোট ৮৬ কোটি টাকা উত্তোলন করেছে।
আইপিওর সংখ্যা কমে যাওয়া নিয়ে বিএসইসি মুখপাত্র মো. রেজাউল করিম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘কোভিড-পরবর্তী ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে অনেক কোম্পানি লোকসানে পড়েছে। ফলে কোম্পানিগুলো শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির শর্তগুলো পূরণ করতে পারছে না। যে কারণে নতুন করে আইপিও আবেদন অনেকটা কমে গেছে। যেগুলো আসছে সেগুলো বিচার-বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে কমিশন।’