দীর্ঘমেয়াদি ঊর্ধ্বমুখী পুঁজিবাজারে আলোচনার বাইরে রয়েছে তালিকাভুক্ত ‘জেড’ ক্যাটেগরির শেয়ার। এসব শেয়ার নেই বিনিয়োগকারীদের পছন্দের তালিকায়, যে কারণে তলানিতে রয়েছে এ ধরনের শেয়ার চাহিদা। বাজারে অন্যসব শেয়ারদর যেখানে প্রতিনিয়ত বাড়ছে, সেখানে উল্টোচিত্র দেখা যাচ্ছে ‘জেড’ ক্যাটেগরির শেয়ারের বেলায়। প্রায় প্রতিদিনই কমতে দেখা যাচ্ছে এসব শেয়ারদর। বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা। কারণ এ ধরনের শেয়ারদর বৃদ্ধি পেলে সেগুলো বিনিয়োগকারী তথা পুঁজিবাজারের জন্য ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ঊর্ধ্বমুখী পুঁজিবাজারে সাধারণত ‘জেড’ ক্যাটেগরির শেয়ার চাহিদা বাড়তে দেখা যায়। ২০১০ সালের বাজারেও এমন চিত্র লক্ষণীয় ছিল। সেই সময় অন্যসব শেয়ারের পাশাপাশি কোনো ধরনের সংবেদনশীল তথ্য ছাড়াই বাড়ছিল এসব শেয়ারদর। শেষ পর্যন্ত এ ধরনের কোম্পানি থেকেই বেশি প্রতারিত হন বিনিয়োগকারীরা।
এদিকে দীর্ঘ ১০ বছরেরও বেশি সময় পরে বাজারে স্থিতিশীল পরিবেশ ফিরে এসেছে, যার জের ধরে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারদরের পাশাপাশি বাড়ছে সূচক। তবে এবার সতর্ক রয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। দেখেশুনে বিনিয়োগ করছেন তারা। পাশাপাশি আলোচনার বাইরে রেখেছেন ‘জেড’ ক্যাটেগরির শেয়ার। এটাকে ভালো লক্ষণ বলছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা। তবে কিছু দুর্বল কোম্পানির শেয়ারদর বৃদ্ধির বিষয়ে সতর্ক হতে বলেছেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ‘জেড’ ও দুর্বল কোম্পানির শেয়ার নিয়ে পুঁজিবাজারে কারসাজির ঘটনা বেশি ঘটে। তাই বিনিয়োগকারীরা যখন এটি থেকে দূরে থাকেন তখন তারা নিজেদের নিরাপদে রাখেন। তিনি বলেন, ঊর্ধ্বমুখী পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের সবচেয়ে বেশি সতর্ক থাকা দরকার। যদিও বাজারের প্রতি বিএসইসি নজরদারি রাখছে, তারপরও বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকার বিকল্প নেই।
বাজারচিত্রেও পিছিয়ে ছিল ‘জেড’ ক্যাটেগরির শেয়ার। বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের তালিকায় ছিল না এসব শেয়ার, যে কারণে তালিকাভুক্ত ৩৭টি ‘জেড’ ক্যাটেগরির কোম্পানির মধ্যে সামান্য দর বাড়তে দেখা যায় সাতটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারে।
পুঁজিবাজারে বছরের বেশিরভাগ সময়ই অধিকাংশ ‘জেড’ ক্যাটেগরির কোম্পানির শেয়ারের দর বৃদ্ধির দৌরাত্ম্য দেখা যায়। কারণ ছাড়াই বাড়তে থাকে এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর। জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানগুলোর উত্তর থাকে তাদের কাছে দর বাড়ার বিষয়ে কোনো সংবেদনশীল তথ্য নেই। এমন পরিস্থিতিতে ২০১৮ সালে এসব কোম্পানির প্রতি নজরদারি বাড়ায় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও ডিএসই কর্তৃপক্ষ। এ ধরনের কিছু কোম্পানির তালিকা করে তারা নজরদারিতে রাখে, কিন্তু তার পরও কাজ হয়নি। থেমে ছিল না এসব কোম্পানির শেয়ারদর বৃদ্ধি।
বিষয়টি নিয়ে কথা বললে একটি ব্রোকারেজ হাউসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, বাজারে যারা কারসাজি করে, তাদের নজর থাকে স্বল্পমূলধনি এবং ‘জেড’ ও কম শেয়ার রয়েছে এমন কোম্পানির দিকে। কারণ এসব কোম্পানি অপেক্ষাকৃত কম পুঁজি নিয়ে গেম করতে পারে। এর বেশিরভাগের সঙ্গে কোম্পানির লোক জড়িত। ফায়দা নিয়ে তারা এসব শেয়ার ছেড়ে চলে যান। আর তাদের ফাঁদে পা দেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। সবশেষে তারাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন। তবে বিনিয়োগকারীরা এখন কিছুটা হলেও সচেতন হয়েছেন, এটা ভালো খবর। কারণ এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগে লাভের চেয়ে ঝুঁকি বেশি থাকে।